নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ:
দিন যতই যাচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। প্রতিবারই এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে দ্বন্দ্ব-কলহ লেগেই থাকে। এক পক্ষের বিরুদ্ধে অপর পক্ষের কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলতেই থাকে। বরাবরই একে অপরকে আওয়ামীলীগের দালাল আখ্যায়িত করে থাকেন। এবারের নির্বাচনেও ঠিক এরকমই দ্বন্দ্ব-কলহের রূপ পেতে শুরু করছে। ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে দুই প্যানেলে নির্বাচন করারও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বিগত নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহ করে নির্বাচন করার রেকর্ড রয়েছে। সর্বশেষ সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেই বিদ্রোহী প্রার্থীর জয় লাভেরও রেকর্ড রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি কয়েকবার জয়লাভ করে এবং মহানগর বিএনপির পদ পেয়ে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান আদালতপাড়ায় একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তার বলয়ে বিএনপির অনেক আইনজীবী রয়েছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ট এড. তৈমূর আলম খন্দকারের অনেক আগে থেকেই আদালতপাড়ায় একটি কর্তৃত্ব রয়েছে। তবে এর মধ্যে অনেক আইনজীবীই এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের দলে নাম লিখিয়েছেন।
ফলে যার যার অবস্থান থেকে আদালতপাড়াই নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংখ্যার আধিক্য থাকা সত্ত্বেও বিগত কয়েকবারের নির্বাচনে তাদের প্যানেল পরাজিত হয়েছে। এই পরাজয়ের পিছনে একে অপরের বিরুদ্ধে নিজেদেরকে আওয়ামীলীগের কাছে বিক্রি হওয়ার অভিযোগ তুলছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সতিমির নির্বাচন উপলক্ষে আদালতপাড়ায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিগত কয়েক দিনের কার্যক্রমে সেই বিরোধ আবারো নতুনভাবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দুই পক্ষ আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন।
একদিকে আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচ তলায় এড. তৈমূর আলম খন্দকারসহ তার পক্ষের আইনজীবীরা মিলে জন্মদিনের কেক কেটেছেন। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ খান ভাষানী ভূইয়া, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান খান খোকা, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দীন সরকার, অ্যাডভোকেট শহীদ সারোয়ার ও অ্যাডভোকেট এসএম গালিবসহ ও তৈমূরপন্থী অন্যান্য আইনজীবীরা।
অন্যদিকে সমিতি ভবনে জায়গা না পেয়ে বর্ধিত টিনসেড ভবনের নিচে দোয়া ও আলোচনা শেষে সমিতির ভবনের সামনে কেক কাটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সাখাওয়াত হোসেন খানসহ তার পক্ষের আইনজীবীরা। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরেক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মোল্লা ও অ্যাডভোকেট রকিবুল হাসান শিমুল সহ সাখাওয়াত পন্থী অন্যান্য আইনজীবীরা।
এছাড়া এর পরের দিন গত মঙ্গলবার এজিএম উপলক্ষে এড. সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষের আইনজীবীরা প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন। যদিও এড. সাখাওয়াত হোসেন খান নিজের কোন গ্রুপ নেই বলে দাবি করছেন। ওই সভায় সকল আইনজীবীরা এড. তৈমূর আলমের উপর নাজমুল হোসেনের প্রেতাত্মা ভর করেছে বলে দাবি করেছেন। তাকে পাগল বলেও দাবি করা হয়েছে। এদিকে এই বক্তব্যে ক্ষেপেছেন তৈমূরপন্থী আইনজীবীরা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এড. তৈমূর আলমকে নিয়ে এরকম বক্তব্য দেয়া কখনোই ঠিক হয়নি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহের অবসান না হলে এবারের নির্বাচনেও জাতীয়তাবাদী প্যানেলের ভরাডুবি হবে। যা দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।